নিজস্ব প্রতিবেদক, লামা-আলীকদম থেকে :: আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে আলীকদম পাহাড়ি সীমান্তে সক্রিয় হয়ে উঠেছে একাধিক গরু চোরাচালান চক্র। ফলে এখন আলীকদমের পাহাড়ি সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে আসছে শত শত গরু। মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর কতিপয় অসাধু সদস্য এবং বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের দালালদের সহযোগিতায় এসব গরু আনা হচ্ছে। আলীকদমে বিজিবি ও প্রশাসনের পৃথক দুটি অভিযানে ইতিমধ্যে ৬৫টি গরু জব্দ করা হলেও বন্ধ হয়নি গরু চোরাচালান চক্রের তৎপরতা। পাহাড়ি সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বিদেশি গরু আসা অব্যাহত থাকলে কোরবানির ঈদে দেশীয় খামারিরা লোকসানের কবলে পড়বেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আলীকদম উপজেলার কুরুকপাতা ইউনিয়নের পশ্চিম এবং দক্ষিণে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ অবস্থিত। এ ইউনিয়নের সীমান্তের বেশির ভাগ এলাকায় অরক্ষিত ও দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল। এই ইউনিয়নের সীমান্তেই মিয়ানমারের অবস্থান। ফলে এসব এলাকার পাহাড়ি সীমান্ত পথ দিয়েই চোরাচালান কারবারিরা নির্বিঘ্নে অবৈধভাবে নিয়ে আসছে থাইল্যান্ডের ব্রাহামাসহ মিায়ানমারের বিভিন্ন জাতের শত শত গরু। চোরাই পথে আসা এ সকল গরু পাহাড়ি সীমান্ত পার করে প্রথমে কুরুকপাতা ইউনিয়নের মারান পাড়া, খেতা ঝিরিসহ বিভিন্ন এলাকায় রাখা হয়। কখনো কখনো মাতামুহুরি রিজার্ভের গভীর বনাঞ্চলেও ছেড়ে দেয়া হয় এসকল গরু। পরবর্তীতে সুযোগ বুঝে আলীকদম–কুরুকপাতা সড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ট্রাক যোগে আলীকদম–লামা–ফাঁসিয়াখালী সড়ক পথে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
অভিযোগ রয়েছে বিশেষ সুবিধা হাসিলের মাধ্যমে গরু চোরাচালান চক্রকে সহায়তা করছে আলীকদমের গরু বাজার ইজারাদাররা। আলীকদম বাজারে থেকে এসকল গরু ক্রয়–বিক্রয় হয়েছে মর্মে রশিদ দেয়ার কারণে তা দেখিয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন চেকপোস্ট গুলো নির্বিঘ্নে অবৈধভাবে আসা গরু পার করে নিয়ে যাচ্ছেন গরু চোরাচালান চক্র।
আলীকদমের পাহাড়ি সীমান্ত পথ দিয়ে মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে গরু আসার খবরে গত ১৮ মে আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহেরুবা ইসলাম মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আলীকদম–পোয়ামুহুরী সড়কের বাবু পাড়া এলাকা থেকে দুটি ট্রাকসহ ২৫ টি গরু ও এক পাচারকারীকে আটক করেন। এর ৫ দিন পর ২৩ মে গভীর রাতে গোপন খবরের ভিত্তিতে আলীকদম ৫৭, বিজিবি ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ইফতেখারের নির্দেশে বিজিবির সদস্যরা গভীর জঙ্গল থেকে আরও ৪০টি গরু জব্দ করেন।
বিজিবির জব্দকৃত গরু গুলো কাস্টমসের মাধ্যমে নিলাম দেয়া হলেও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের জব্দ গরুর বিষয়ে মামলা চলমান বলে জানা গেছে।
এদিকে গত ৬ জুন সরেজমিন পরিদর্শন করে আলীকদমের গরু বাজারে অবৈধভাবে মিয়ানমার থেকে আসা গরুর ছবি তুলতে গেলে গরু চোরাচালান চক্রের সদস্যরা লামার দুই সাংবাদিককে মারধর করে এবং মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভাংচুর করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় ভোক্তভুগী এক সাংবাদিক আলীকদম থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
আলীকদম থানা অফিসার ইনচার্জ মো. নাছির উদ্দিন সরকার সাংবাদিকের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। অবৈধভাবে বিদেশি গরু আসার বিষয়ে তিনি বলেন, দুর্গম পাহাড়ি সীমান্ত পথে আমাদের তেমন কিছু করার না থাকলেও সড়ক পথে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহেরুবা ইসলাম বলেন, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে গরু আসার খবরে প্রশাসন এবং বিজিবির পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে গরু জব্দ করা হয়েছে। অব্যাহত অভিযান ও তৎপরতা বৃদ্ধির কারণে সড়ক পথে এখন আর গরু নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। শুনেছি সড়ক পথের পরিবর্তে পাহাড়ি পথে গরু যাচ্ছে। আমরা সে বিষয়েও খোঁজ খবর নিচ্ছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পাঠকের মতামত: